নির্ভীক কণ্ঠ ওয়েব ডেস্ক ::: টোকিও প্যারা অলিম্পিক শুরু হয়েছে 24 শে আগস্ট তারিখে এবং শেষ হবে 5 ই সেপ্টেম্বর 2021 তারিখে। টোকিও প্যারা অলিম্পিকে ভারতীয় প্রতিযোগীদের সাফল্যের কথা| টোকিও প্যারা অলিম্পিকে এ পর্যন্ত ভারত পদক পেলেও দুটি সোনা চারটি রুপো এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক অপরদিকে আজ পর্যন্ত চীন প্রথম স্থান দখল করেছে তারপর পদক 57 টি সোনা 36t রুপা এবং 31 টি ব্রোঞ্জ পদক আমেরিকার রয়েছে চতুর্থ স্থানে দ্বিতীয় স্থানে গ্রেট ব্রিটেন|টোকিও প্যারাঅলিম্পিকে দেশের প্রথম পদক এনে দিলেন প্যাডলার ভাবিনা প্যাটেল। মহিলা টেবল টেনিস সিঙ্গলসের (ক্লাস ৪) ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর ইয়াং ঝৌ’য়ের কাছে ০-৩ ব্যবধানে হেরে গিয়েছেন ভাবিনা। ভারতীয় প্যাডলারের কৃতিত্ব তাতে কিছুমাত্র কম নয়। শীর্ষর্যাঙ্কিংয়ে থাকা প্রতিযোগীদের হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। প্যারাঅলিম্পিক টেবল টেনিসে ভাবিনার রুপোই ভারতের প্রথম পদক। ফাইনালে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন ভাবিনা প্যাটেল। তবে বেজিং, লন্ডন প্যারা অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ঝৌ প্রথম সেট ১১-৭ জিতে নেন। দ্বিতীয় সেটেও এগিয়ে যান ৭-১ ব্যবধানে। একসময় পর পর তিনটি পয়েন্ট তুলে ম্যাচে ফেরবার চেষ্টা করেছিলেন ভাবিনা। তবে ঝৌ নিয়ন্ত্রন খোয়াননি। ৫-১১ ব্যবধানে দ্বিতীয় সেট হেরে ০-২ পিছিয়ে পড়েন ভাবিনা। তৃতীয় সেটে দুর্দান্ত লড়াই হয়। প্রথমে ২-৪ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়লেও একসময় ৮-৬ করে ফেরেছিলেন ভাবিনা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ৬-১১ ব্যবধানে তৃতীয় সেট হারায় ম্যাচের ফল হয় ০-৩। ভাবিনার লড়াই প্যারাঅলিম্পিক টেবল টেনিসে ভারতের প্রথম পদক এনে দিয়েছে। প্রথমবার প্যারাঅলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেই চমকে দিয়েছেন গুজরাতের ৩৪ বছরের মেয়েটি। সেমিফাইনালে বিশ্বের তিন নম্বর চীনেরই মিয়াও ঝ্যাংয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন ভাবিনা প্যাটেল। এর আগের এগারোটি সাক্ষাতে প্রতিবারই বাজিমাত্ করেছিলেন চীনা প্যাডলার। তবে বড় মঞ্চে ভাবিনা প্রমাণ করে দেন ইতিহাস বা পরিসংখ্যান ও হার মানে মনের জোর, দক্ষতার কাছে। কড়া টক্কর দিয়েছিলেন মিয়াও। তবে চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে নির্নায়ক সেটটি দখল করে অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে নেন ভাবিনা। সোনার লড়াইয়ে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন বিশ্বের একনম্বর চীনেরই ইয়াং ঝৌ। টোকিওতে শেষ আটের ম্যাচে চরম অঘটন ঘটিয়ে রিও প্যারাঅলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন বরিস্লাভা রাঙ্কোভিচকে ৩-০ উড়িয়ে দেন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ১২ নম্বর ভাবিনা। সার্বিয়ান প্যাডলার কোন প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেননি ভাবিনার সামনে। সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার সঙ্গেই পদক নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন ভারতীয় প্যাডলার। কিন্তু ভাবিনা তাতেই সন্তুষ্ট থাকবার পাত্রী নন। নিজের সেরাটা দিয়েই শেষ চারের ম্যাচে বিশ্বের তিন নম্বর মিয়াও ঝ্যাংকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন দুরন্ত ভাবিনা। ২০০৯ সালে শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে টেবল টেনিসকে বেছে নিয়েছিলেন ভাবিনা। জাতীয় স্তরে প্রথম সাফল্য আসে ২০১১ সালে। এরপর নানান আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাপিয়ে খেলেছেন ভাবিনা। ২০১৬ রিও প্যারাঅলিম্পিকের যোগ্যতাঅর্জন করা সত্ত্বেও অংশ নিতে পারেননি এই ভারতীয় প্যাডলার। টোকিওতে ছয় বছর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানটা এমন সুন্দর হবে কেই বা জানত।
রবিবার দিনটা যেন ভারতীয় প্যারা অলিম্পিয়ানদেরই। গেমসে এল দ্বিতীয় সাফল্য। হাই জাম্পে রুপো জিতলেন নিশাদ কুমার। রুপোর পদক দিয়েই দিনের শুরুটা করেছিলেন প্যাডলার ভাবীনাবিন প্যাটেল। প্যারা অলিম্পিকে আসরে টেবিল টেনিসে দেশকে প্রথমবার পদক এনে দিয়ে ইতিহাস গড়ছেন ভাবীনা। সকালে ভাবীনার পদকজয়ের পর বিকেলে দেশবাসীকে সুখবর দিলেন নিশাদ। গেমসে হাই জাম্পের টি-৪৭ ফাইনালে ২.০৬ মিটার উচ্চতায় দেশকে রুপো এনে দিলেন তিনি। সেইসঙ্গে এশিয়ান রেকর্ডও গড়লেন দেশের এই প্যারা অলিম্পিয়ান। ভাগ্য সুপ্রসন্ন না থাকায় অল্পের জন্য সোনা হাতছাড়া হয়ে গেল তাঁর। তবে এর জন্য নিশাদের কোনও আক্ষেপ নেই। নিজের এই সাফল্যে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি। সকালে টেবল টেনিসে ভাবিনা প্যাটেল, বিকালে হাই জাম্পে নিশাদ কুমার রুপো জিতে টোকিও প্যারাঅলিম্পিকে ভারতের দুর্দান্ত সূচনা করেছিলেন। ২.০৬ মিটারের লাফ দিয়ে এশিয়ান রেকর্ড করে রুপো জেতার পরই ১৯.৯১ মিটার ছুঁড়ে করে পুরুষদের এফ ৫২ বিভাগের ডিসকাস থ্রোয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন বিনোদ কুমার। একসময়ে বিএসএফের জওয়ান ছিলেন বিনোদ। কর্মক্ষেত্রের একটি দূর্ঘটনার দরুন প্যারালাইসিস হয়ে যায় তার। এরপর রোহতাকে একটি মুদির দোকান চালাতেন বিনোদ। ২০১৬ রিও প্যারা অলিম্পিকে দীপা মালিককে পদক জিততে দেখেই অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। নিজের প্রথম প্যারা অলিম্পিকেই পদক জিতলেন বিনোদ। ফাইনালের প্রথম থ্রো’টি ১৭.৪৬ মিটারের করেছিলেন বিনোদ। ১৯.১২ মিটারের চতুর্থ থ্রোয়ের পরই আত্মবিশ্বাস ফিরে পান তিনি। বিনোদের পঞ্চম থ্রোটি এশিয়ান রেকর্ড, ১৯.৯১ মিটার। এটাই ভারতীয় প্রতিযোগীর সেরা থ্রো। ২০.০২ মিটার ছুঁড়ে সোনা জিতেছেন পোল্যান্ডের কোসেউইকজ। রুপো যায় ক্রোয়েশিয়ার ভেলিমির সান্দোরের দখলে। তিনি ১৯.৯৮ মিটারের থ্রো করেন। শেষ প্রতিযোগী লাটভিয়ার আইগারস আপিনিজ ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ১৯.৫৪ মিটারের থ্রো করে। তবে শেষ পর্যন্ত বিনোদের ১৯.৯১ মিটার পের করতে পারেননি প্যারাঅলিম্পিকের রেকর্ডধারী রিও’র স্বর্ণপদকজয়ী আপিনিজ। এশিয়ান রেকর্ড করে বিএসএফের প্রাক্তন কর্মী দেশের তৃতীয় পদকটি এনে দিলেন। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে প্যারাঅলিম্পিকে সোনা জিতে দিনের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন আভানি লেখারা। এরপর প্রত্যাশামতোই এফ৪৬ বিভাগের জ্যাভলিন থ্রোয়ে পদক জিতেছেন দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া ও সুন্দর গুর্জর। ডিসকাস থ্রোয়ে পদক এসেছে যোগেশ কাঠুনিয়ার হাত ধরে। বিকালে পুরুষদের এফ৬৪ বিভাগের জ্যাভলিন থ্রোয়ে ইতিহাস তৈরি করেছেন সুমিত আন্তিল। বিশ্বরেকর্ড করে সোনা জিতেছেন তিনি।হরিয়ানার সোনপত থেকে উঠে আসা সুমিত প্রথম জীবনে কুস্তিতেই মনোনিবেশ করেছিলেন। একটি বাইক দূর্ঘটনার কারণেই বদলে যায় তার গোটা জীবন। পরিবার ও স্থানীয় একজনের পরামর্শে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে জ্যাভলিন কোচ নাভাল সিংহের সাথে দেখা করেছিলেন সুমিত। এই সাক্ষাতই বদলে দিয়েছে যোগেশ্বর দত্তের ভক্তের জীবন। টোকিও প্যারা অলিম্পিকের ফাইনালের প্রথম থ্রোটিতেই ৬৬.৯৫ মিটার পের করে দেন সুমিত। পদকের লক্ষ্যে ঠিক কতোটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হরিয়ানার সোনপতের ছেলে তা বুঝিয়ে দেন পরের থ্রোটিতে। দ্বিতীয় প্রয়াসে ৬৮.০৮ মিটার পার করে বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন সুমিত। পঞ্চম থ্রোটিতে ৬৮.৫৫ মিটার ছুঁড়ে নিজের সদ্যগড়া বিশ্বরেকর্ড ভেঙ্গে নতুন বিশ্বরেকর্ড তৈরি করেন ভারতীয় প্রতিযোগী।
অলিম্পিকে ভারতকে একমাত্র সোনার পদকটি এনে দিয়েছিলেন নীরজ চোপড়া। ১২১ বছর পর ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ডে দেশকে পদক এনে দেন তিনি। কবে অলিম্পিকের পর এবার প্যারা অলিম্পিকেও সোনাজয়ের স্বাদ পেল ভারত। শুটিং সোনা জিতলেন অবনী লেখারা। মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে সোনাজয় করেন বছর ১৯-এর এই মেয়ে। সেইসঙ্গে বিশ্বরেকর্ড করে ইতিহাসও তৈরি করেন তিনি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই বড়সড় সাফল্যের জেরে অবনীকে বিশেষ উপহার দিচ্ছে খ্যাতনামা গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা মহিন্দ্রা। তাঁর এই সাফল্যে গোটা দেশজুড়ে বইছে খুশির হাওয়া। বিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার চেয়ারম্যান আনন্দ মহিন্দ্রাও অবনীর সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভেসেছেন। তাই টুইট করে সোনার মেয়ের জন্য করলেন বিশেষ উপহার ঘোষণা করলেন তিনি। টুইটে মহিন্দ্রা চেয়ারম্যান লেখেন, ‘একসপ্তাহ আগে অ্যাথলিট দীপা মালিক আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য এসইউভি তৈরি করতে। যেমনটা সে টোকিওতে ব্যবহার করে। আমি আমার সমস্ত সহকর্মী এবং ডেভলপমেন্টের প্রধানকে এই চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আর আমাদের বানানো এই নতুন গাড়ি আমরা প্রথম অবনী লেখারাকেই উপহার দিতে চাই।’ সোনা জয়ের পরই একের পর এক শুভেচ্ছা বার্তায় ভেসে গিয়েছেন এই মহিলা শুটার।