পানিহাটি ::: উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির দই-চিঁড়ের মেলায় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। পানিহাটির মহোত্সবতলা ঘাটে ভিড়ের চাপে এবং প্রচন্ড গরমের জেরে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ পূণ্যার্থীর। অসুস্থ হয়েছেন আরও ৫০ জন পূণ্যার্থী। ইতিমধ্যে প্রশাসনের তরফে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।করোনার জন্য গত ২ বছর ধরে বন্ধ ছিল দই-চিড়ে উত্সব। ২ বছর পর পানিহাটিতে গঙ্গা তীরবর্তী মহোত্সব তলা ঘাটে দণ্ড মহোত্সব পালিত হচ্ছে। এ বছর এই উত্সব ঘিরে মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ছিল অনেক বেশি। সকাল থেকেই দলে দলে পূণ্যার্থীরা মেলায় আসতে থাকেন। পানিহাটির দই-চিঁড়ের মেলায় চরম বিশৃঙ্খলা। ভিড়ের চাপে প্রচন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। অসুস্থ হয়েছেন আরও অনেকে। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় হাসপাতালে।
পাশাপাশি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পও গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানেও অনেকের চিকিত্সা চলছে। এই দুর্ঘটনার পরই মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। বাকি পুণ্যার্থীদের মেলা থেকে বাইরে বের করে আনা হচ্ছে। রবিবার পানিহাটির মহোত্সব ঘাটে এই মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল ভিড় হয়েছিল পুন্যার্থীদের। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাতারে-কাতারে মানুষ ভিড় করেন মেলা প্রাঙ্গণে। তবে মেলার মূল মন্দিরে যাওয়ার রাস্তাটি বেশ সরু। সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়েই ভিড়ে গাদাগাদি দশা হয় পুন্যার্থীদের। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন একের পর এক পুন্যার্থী। বর্তমানে পানিহাটি পৌরসভার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় এই দন্ড মহোত্সব বা চিঁড়ের মেলা।
টুইটে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘পানিহাটির ইসকন মন্দিরের দণ্ড মহোত্সবে প্রচণ্ড গরম ও আদ্রর্তায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। পুলিশ কমিশনার এবং জেলাশসক ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। সমস্তরকম সাহায্য করছেন তাঁরা।’ মৃত পুণ্যার্থীদের পরিবারের প্রতি শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই পুন্যার্থীর। জানা গিয়েছে, ৫০-এরও বেশি পুন্যার্থী গরমে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থলে আসেন সিপিও। দ্রুত মেলা প্রাঙ্গন খালি করে দেওয়ার চেষ্টা চলে। মন্দিরের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সোমবার ৫০৬ তম দন্ড মহোত্সব পালিত হচ্ছে পানিহাটি গঙ্গার তীরবর্তী মহোত্সব তলা ঘাটে। এই দন্ড মহোত্সব শুধু পানিহাটি নয় সারা জেলাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৈষ্ণব ধর্মালম্বী ভক্তরা ভীড় জমান এই দন্ড মহোত্সবে। পানিহাটির ঐতিহ্যবাহী দন্ড মহোত্সব চিঁড়ের মেলা বলেও পরিচিত বৈষ্ণব সমাজে কেউবা আবার এই দন্ড মহোত্সব চুলের মেলাতে মালশা ভোগ হিসেবেও পালন করেন। কথিত আছে ৫০৫ বছর আগে রঘুনাথ দাস গোস্বামী মহাপ্রভুর দর্শনের জন্য গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু কে মিথ্যে বলেছিলে আর সেটা চৈতন্য মহাপ্রভু জানতেই রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে দণ্ড দেন। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেব রঘুনাথ দাস গোস্বামী কে শাস্তি দিয়ে ছিলেন উপস্থিত ভক্ত বৃন্দকে আহার হিসেবে দই চিড়ে খাওয়াতে হবে। সেই থেকে প্রতিবছর পানিহাটি মহোত্সব তলা ঘাটে দন্ড মহোত্সব পালিত হচ্ছে মহা সমারোহে।