নির্ভীক কণ্ঠ নিউজ গ্রুপ ::: জিলিপি ভালোবাসেন না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে শুধু ভারত নয়, জিলিপির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে উত্তর ভারত হয়ে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও তুরস্কেও। বিভিন্ন এলাকায় জিলিপির আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকম। সেরকমই বাঁকুড়ার জাম্বো জিলিপি। যার একেকটির ওজন দেড় থেকে তিন কেজি পর্যন্ত। শুধু ওজন ও আকারে নয়, বাঁকুড়ার জাম্বো জিলিপির প্য়াঁচে ফুটে ওঠে রকমারি নকশাও।দশকের পর দশক ধরে ভাদ্র সংক্রান্তিতে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় এই জাম্বো জিলাপি তৈরি হয়। মূলত বিশ্বকর্মা ও ভাদু পুজো উপলক্ষ্য়েই মিস্টি প্রস্তুতকারকরা এই জাম্বো জিলিপি তৈরি করেন। এই সময় অন্যান্য মিষ্টি তৈরির কাজ বন্ধ রাখা হয়। আর বিশালাকার এই জিলিপি পিস হিসেবে নয়, বিক্রি হয় ওজন দরে। আকার, ওজন এবং দুর্দান্ত নকশার জন্য় বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার এই জাম্বো জিলিপির খ্য়াতি ইতিমধ্য়েই ছড়িয়ে পড়েছে বাঁকুড়ার সীমা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা ও রাজ্যেও।
জগত্সভায় বাঙালির প্রিয় খাবার জিলিপির জুড়ি মেলা ভার। পাড়ার মিষ্টির দোকান থেকে শুরু করে পুজো-পার্বণ হোক বা মেলা প্রাঙ্গন। জিলিপির সুস্বাদু প্যাচে মন মজেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আজ বিশ্বকর্মা পুজোর উপলক্ষে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুরা রীতি মেনে জাম্বো জিলিপিতে মাতলেন বাঁকুড়ার মানুষ । রীতি মেনে ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে জাম্বো জিলাপিতে মজল বাঁকুড়া জেলার মানুষ । দশকের পর দশক ধরে ভাদ্র সংক্রান্তিতে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় এই জাম্বো জিলাপি তৈরি হয়। এক একটি জিলাপির ওজন হয় দেড় থেকে তিন কিলোগ্রাম পর্যন্ত । শুধু বাড়িতে খাওয়া বা পুজোর প্রসাদ হিসাবে নয় অন্যকে সারপ্রাইজ গিফট দেওয়ার জন্যও এই জিলাপি কিনে নিয়ে যান খাদ্যরসিকরা ।
কেঞ্জাকুড়ার জাম্বো জিলিপির কত পুরানো তা কেউ জানেন না। তবে গত কয়েক দশকে ধীরে ধীরে এর সুখ্যাতি কেঞ্জাকুড়ার সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ,পশ্চিম বর্ধমান জেলা ও ঝাড়খন্ড ও দিল্লি রাজ্যের একাংশেও। মূলত ভাদু পুজো ও বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে কেঞ্জাকুড়ার মিষ্টি প্রস্তুতকারকরা এই জিলিপি তৈরি করেন। প্রতি বছর ভাদ্র সংক্রান্তির সময় অন্যান্য সব মিষ্টি তৈরি বন্ধ রেখে এলাকার সমস্ত দোকানে শুরু হয়ে যায় জাম্বো জিলিপি তৈরির কাজ। মূলত বিরি ডালের বেসন, ময়দা ও চাল গুড়ো দিয়ে তৈরি হয় এই জিলিপি। এই জিলিপির আকার বা ওজনে যেমন ভিন্নতা থাকে তেমনই জিলিপির প্যাঁচেও ফুটে ওঠে রকমারি নকশা। এখানে জিলিপি বিক্রি হয় কিলোদরে। এর আকার বা ওজনে যেমন ভিন্নতা থাকে, তেমনই জিলিপির প্যাঁচেও ফুটে ওঠে রকমারি নকশা। প্রতি পিস হিসাবে নয়, ওজন দরেই বিক্রি হয় এই বিশালাকার জিলাপিগুলি । এবছর প্রতি কিলো বিকোচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। জাম্বো জিলিপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৪০ টাকা কেজি দরে। তাও বিক্রি হচ্ছে না বলে আক্ষেপ ব্য়বসায়ীদের। এক ব্য়বসায়ীর দাবি, করোনা সংক্রমণই ব্য়বসা মন্দা এনে দিয়েছে। গত দুই বছর আলো ব্য়বসা হয়নি। আমরা ভেবেছিলাম বিধিনিষেধ কম থাকায় এই বছর ব্য়বসা জমবে। কিন্তু কোথায় কি, সারাদিনে পঞ্চাশটির মতো বিক্রি হচ্ছে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনও বিক্রি সেভাবে নেই। এখন আশা ভাদু পুজোর বাজার।
মুক্তা দত্ত নামে এক দোকানদার বলেন, জিলাপির কদর এই বছরে অনেকটাই কম করোনা ভাইরাসের কারণে। অন্যান্য বছর ভালই বিক্রি হত। এই বছর সারাদিনে পঞ্চাশটির মতো বিক্রি হচ্ছে আমাদের। অনেকটাই লস। এই জিলাপি বাইরে যেখানে আত্মীয়-স্বজন আছে সেখানে যায়। অশোক ভুঁই নামে অপর এক দোকানদার বলেন, এই জিলাপির সাইজ হচ্ছে দুই থেকে আড়াই কেজি। দাম ১৪০ টাকা প্রতি কেজিতে। আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় গিফট হিসাবে। সব জায়গায় করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজার অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। একটা সময় দেড়শো থেকে দুশো পিস বিক্রি হত। এই বছর অনেকটাই কমে গেছে। অপর এক মিষ্টি প্রস্তুতকারক তারক নাথ কর্মকারও বলেন, এবছর বিক্রিবাটা একটু কম আছে। সৌমেন সিংহ নামে এক ক্রেতা বলেন, এরকম জিলাপি আমরা আগে কখনো দেখিনি, এই প্রথমবার দেখছি। এটা নেওয়ার জন্য এতদূর থেকে আসা। আমার বাড়ি গঙ্গাজলঘাটিতে। ওইখান থেকে আসা এই জিলাপি নিতে। জিলাপি নিয়ে যাব।
করোনাকালে কেঞ্জাকুড়ার জাম্বো জিলিপির বাজারে কিছুটা মন্দা এসেছে। তবুও মিষ্টি প্রেমীদের কাছে জাম্বো জিলিপি পৌঁছে দিতে কোনও কসুর করছেন না বাঁকুড়ার মিষ্টি প্রস্তুতকারকরা। কিন্তু এই করোনা মহামারীর সময় থেকেই জাম্বো জিলিপির কড়াইয়ে উত্তাপ কমতে শুরু করেছে। গত দুই বছরে করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউন এবং ব্য়বসায়ে মন্দার জেরে এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে জিলিপির আকার। পাশাপাশি বিক্রি কমেছে হু হু করে। চলতি বছরও বিশ্বকর্মা পুজোয় জাম্বো জিলিপির বরাত অনেক কম। স্থানীয় কল-কারখানা থেকে কিছু অর্ডার এলেও অন্য় জেলা ও পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড থেকে বরাত কম এসেছে।