আজ সংবিধান দিবস :: জেনে নিন প্রকৃত অর্থ জানুন মমতা ব্যানার্জি কি বার্তা দিলেন, সুজন চক্রবর্তী কি কটাক্ষ করলেন

0

নির্ভীক কণ্ঠ নিউজ গ্রুপ ::: ভারতের সংবিধান দিবস 26 শে নভেম্বর। স্বাধীনতা শব্দের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি হয়েছিল এই দিনটি থেকে। যদিও ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করেছিল 1947 সালের 15 ই আগস্ট। সেদিন অবশ্য ভারতের প্রকৃত পরিচয় ছিল বৃটেনের স্বায়ত্তশাসিত রাস্ট্র অথবা ডোমেইন। তখনো পর্যন্ত ভারতবর্ষের সর্বময় কর্তা ছিলেন বৃটেনের সম্রাট বা-সম্রাজ্ঞী । 15 ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা আইন হয় তা 1935 সালের ভারত শাসন আইনের সংশোধিত রূপ। ভারতীয় স্বাধীনতা আইনে স্পষ্ট লেখা আছে 15 ই আগস্ট থেকে স্বশাসনের অধিকারপ্রাপ্ত 2 স্বাধীন ব্রিটিশ উপনিবেশ তৈরি হলো একটি ভারত এবং অপরটি পাকিস্তান ।এই আইনের 3 নং ধারায় লেখা রয়েছে পাকিস্তানের অন্তর্গত এলাকাছাড়া ব্রিটিশ ভারতের যতটা এলাকা ছিল তা মহানুভব ব্রিটিশ সম্রাটের সার্বভৌমত্বের অধীন ভারতের এলাকা বলে গৃহীত হবে। আবার 5 নং ধারায় স্পষ্ট লেখা মহানুভব ব্রিটিশ সম্রাটের নিয়োগ করা গভর্নর জেনারেল সম্রাটের প্রতিনিধি হিসেবে নতুন স্বায়ত্ত শাসিত রাষ্ট্রের সরকার চালনা করবেন ।আর দুই রাষ্ট্রের বিধানমণ্ডল নতুন আইন না করা পর্যন্ত একজনই দুই রাষ্ট্রের গভর্নর জেনারেল থাকতে পারবেন। তবে 8 আট নং ধারায় লেখা ছিল সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত গণ পরিষদের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকবে।

১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয় যে, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে মেনে চলা হবে ভারতের সংবিধান (Constitution)। এই সংবিধানে সরকারের গঠন, কার্যপদ্ধতি, ক্ষমতা ও কর্তব্য নির্ধারণ, মৌলিক অধিকার,নির্দেশমূলক নীতি, এবং নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শের রূপরেখাটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে এই সংবিধান কার্যকরী হয়। প্রথমে সংবিধান হাতের লেখায় তৈরি হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান ভারতের। জানা যায় এই সংবিধান রচনা করতে সময় লেগেছিল প্রায় তিন বছর। গণ পরিষদ স্বাধীন ভারতের সংবিধানের খসড়া রচনার ঐতিহাসিক কাজ সম্পূর্ণ করেছিল ১৬৫ দিনের ১১টি অধিবেশনে। ভারতের সংবিধান প্রণেতা হিসেবে অবশ্যই বি আর আম্বেদকরের নাম সর্বাগ্রে থাকবে। তবে আমরা অনেকেই জানি না যে এই সংবিধানের ক্যালিগ্রাফ করেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার প্রেম বিহারী নারাইন রাইজাদা। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ডাকে ইটালিক হরফে লিখেছিলেন তিনি।

আর এই সংবিধানের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ তৈরি করেন শিল্পী নন্দলাল বসু। জানা যায়, সংবিধান লেখার সময় মোট ১০০ পেন নিবের ব্যবহার হয়েছিল। হিন্দি লেখার ক্ষেত্রে এই কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন আর এক শিল্পী বসন্ত কিসান বৈদ্য। হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় হাতে লেখা সেই প্রথম সংবিধান আজও পার্লামেন্টের লাইব্রেরিতে একটি বিশেষ হিলিয়াম কেসে সংরক্ষিত রয়েছে। হিলিয়াম কেসে রাখার ফলে প্রথম সংবিধানটি আজও অক্ষত রয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ ও নীতি, যেগুলির ওপর ভিত্তি করে রচিত হয় সংবিধান।

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সদ্য স্বাধীন ভারতীয়দের আশা আকাঙ্খা ও ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে রচিত হয়েছিল ভারতের সংবিধান। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের উদ্দেশ্য বর্ণিত রয়েছে। ভারতের সংবিধান রচিত হয়েছিল ১৯৪৬-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে। সময় লেগেছিল ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন। দেশের ইতিহাসে খুবই সংকটজনক ছিল ওই পর্ব। হিংসা, দেশভাগ, সামাজিক ও লিঙ্গ বৈষম্য এবং আর্থিক অনগ্রসরতা সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। সামাজিক সংহতি বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।

সংবিধান দিবসে সংবিধান প্রণেতাদের স্মরণ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যুইটে তিনি বার্তা দেন, সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। তার নীতি, মূল্যবোধ বজায় রাখার জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করা উচিত্‍।

আজ সংবিধান দিবস। দেশের সংবিধানের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি। যদিও বিরোধী দলগুলি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল না।সেন্ট্রাল হলে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সেখানে চৌদ্দটি বিরোধীদল হাজির ছিল না। সেই নিয়ে সরব হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ।

এই প্রসঙ্গে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী  বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজকে যে ভাষণ দিয়েছেন সেই ভাষন কী বৈধ প্রশ্ন তোলেন সুজন চক্রবর্তী। প্রজাতন্ত্র দিবস সেই দিন যেদিন সংবিধান কার্যকর হলো। ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি সংবিধান কার্যকর হয়। ভারতবর্ষে প্রজাতন্ত্র দিবসের মর্যাদাকে খাটো করার জন্য একটা সংবিধান দিবসের প্রস্তাবনা চালু করেছেন নরেন্দ্র মোদী। এটার বৈধতা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে থাকবার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, ভারতবর্ষের সংবিধান প্রসঙ্গ ওটা ওদের পছন্দ হবে কেন ? সংবিধান মানে না ,ভারতবর্ষের স্বাধীনতা মানে না , তারা এটা পলিটিকাল এজেন্ডা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন। স্বাধীনতা সাল ১৯৪৭ মানে ? না ২০১৪ স্বাধীনতা বলে মনে করে? ওদের সমস্ত কিছু বিশ্বাসগুলো আলাদা। সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা ওদের কোনো নেই। ২০১৫ সালের আগে কোনো দিন ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালিত হয়নি। সংবিধানকে ওরা তছনছ করতে চায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here